কৃষকের জানালা

স্বরূপকাঠির আমড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর, ২৩ আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২৪

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার কুড়িয়ানার পেয়ারা মতই এই এলাকার আমড়ার সুখ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। স্বাদ ও পুষ্টিগুনে অনন্য এ আমড়ার কদর রয়েছে দেশজুড়ে। বরিশাল বিভাগের আমড়ার সিংহভাগ ফলন হয় পিরোজপুর জেলার এই স্বরূপকাঠি উপজেলায়। এ উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে আমড়ার আবাদ চলছে ৭০-৮০ বছর পূর্ব থেকে। এ বছর এই এলাকায় আমড়ার ফলন ভালো হয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরবস্থা ও করোনাকালীন সময়ে তেমন ক্রেতা পাইকাররা না আসায় ব্যাপক লোকসানের সম্মুখিন হয়েছেন এখানকার চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ বছর আমড়ার সাইজ ফলন ও ভালো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় এখানকার চাষী ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত বছরগুলোর লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে এবছর লাভবান হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে এ বছর উপজেলার ১৬০ হেক্টর জমিতে এই আমড়ার মুল চাষ হচ্ছে। এ বছর প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন আমড়া উৎপাদিত হয়েছে। আমড়ার চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থার সাথে ঐ সমস্ত এলাকার প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় হতে কার্তিক মাস পর্যন্ত আমড়ার মৌসুম হিসেবে ধরা হয়।

উপজেলার কুড়িয়ানা, আটঘর, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, ধলহার, আতা, মাদ্রাসহ ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ১০ টি খালে প্রতিদিনই আমড়ার ভাসমান হাট বসে। আমড়া চাষীরা বাগান থেকে আমড়া পেরে বিক্রয়ের জন্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাটে নিয়ে আসেন।

ব্যাবসায়ীরা আমড়া ক্রয় এবং সরবরাহ করার জন্য ওই হাটে অস্থায়ী আড়ত নির্মান করেছেন। আড়তগুলোতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও কাজ করে চলছেন। পুরুষ শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা কাজ করে ৬ শত থেকে ৮ শত টাকা এবং নারী শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ ঘন্টা কাজ করে ৪ থেকে ৫ শত টাকা মজুরী পান।

সকালে আড়তে কাজকর্মের তেমন কোন চাপ না থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে হাটে ও আড়তগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কাজে সরগরম হয়ে ওঠে ওই সকল এলাকা। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আমড়া বেচাকেনা। সন্ধ্যার পর থেকে শ্রমিকেরা আমড়া বাছাই করে প্লাষ্টিকের ক্যারেট, বস্তা ও ঝুড়ি ভর্তি করেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা ট্রাক ও পিকআপে আমড়া বোঝাই করেন। কোন কোন ব্যবসায়ী লঞ্চযোগেও আমড়া সরবরাহ করে থাকেন।

বর্তমানে হাটে আমড়া পাইকারিভাবে মন প্রতি ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছর আমড়ার এ মৌসুমে ঢাকা, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের এক শ্রেণির পাইকাররা এখান থেকে হাজার হাজার মন আমড়া ক্রয় করে লঞ্চ, ট্রাক ও পিকআপযোগে নিয়ে যায়। অপরপক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন শত শত মন আমড়া এখান থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান দেয়।

এক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ আশেপাশের এলাকায় আমড়া পৌছাতে ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যেত। এতে করে আমড়া মোকামে পৌছানোর পূর্বে পথেই অনেকটা পচে নষ্ট হয়ে যেত।

ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম লোকসানে পড়ত। এর প্রভাব গিয়ে পড়ত চাষীদের উপর তারাও আমড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ী ও চাষীরা বেশ আনন্দিত। সড়ক পথে এখানকার আমড়া রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাচ্ছে। ফলে সঠিক সময়ে আমড়া বিক্রি করে ব্যবসায়ীরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।

কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আদমকাঠি গ্রামের বাগান মালিক ও আমড়া চাষী অতনু হালদার তনু জানান, এ বছর চৈত্র বৈশাখ মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় গাছের অনেক মুকুল ঝড়ে গেছে ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর আমড়ার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে ফলন কম হলেও আমড়ার সাইজ বেশ বড় হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভালো দাম পাচ্ছি।

এ ব্যাপারে আদমকাঠি হাটের ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন জানান, আগে হাট থেকে আমড়া ক্রয় করে লঞ্চযোগে পরের দিন রাজধানী ঢাকায় পৌছাতাম অথবা সড়ক পথে গেলে মাওয়া ফেরিঘাটে আটকে থেকে সেখানেই অনেক আমড়া পচে নষ্ট হয়ে যেত। ঠিক সময়ে বাজার ধরতে না পারায় উপযুক্ত দাম না পেয়ে লোকসান গুনতে হত। পদ্মা সেতুর কল্যানে দিনের আমড়া কিনে সেদিনই ঢাকায় পৌছাতে পেরে ভালো দাম পাচ্ছি।

আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ও ব্যবসায়ের যে আমূল পরিবর্তন এসেছে তার প্রভাব এই এলাকাতেও পড়েছে। সেতুর কল্যানে এই এলাকার আমড়া ও পেয়ারা চাষী এবং ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হচ্ছে। কুড়িয়ানা বাজার হতে আদমকাঠি হয়ে ভীমরুলী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা ও আদমকাঠির পুলটি সংস্কার করা হলে তারা আদমকাঠিতে বসেই ট্রাক বা পিকআপে আমড়া লোড করতে পারবে এত করে তাদের পরিবহন খরচ অনেকটা কমে যাবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ হতে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এখানকার আমড়া চাষীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আমড়া গাছের রোগ ও পোকা নিধনের উপর কৃষি অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের দিয়ে আমড়ার বাগানে চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নেছারাবাদের ইউএনও মো. মাহবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, ব্যবসাসমৃদ্ধ আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা পুল সংস্কার করা হয়েছে, বাকিগুলো অতিশীঘ্রই সংস্কারের উদ্যোগে নেয়া হবে।

প্রিয় পাঠক, আপনার স্বরচিত আর্টিলে আত্রাই বার্তায় প্রকাশ করতে নিবন্ধন করুণ । আপনার প্রতিভা তুলে ধরুন বাঙালিয়ানদের সাথে। যে কোন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুণ।


আর্টিকেল শেয়ার করুন

আরও খবর