পবিত্র ঈদুল আযহায় যাতায়াতে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২৭৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৩১২টি দুর্ঘটনায় মোট ৩৪০ জন নিহত ও ৫৬৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতি।
শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদুল আযহা-২০২৩ সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারো প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘ এক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
তিনি বলেন, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভাল ছিল। ঈদের ছুটি ১দিন বাড়ানোর সুফল মিলেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ০৮ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে।
তবে, পরিকল্পনার গলদে উত্তরাঞ্চলের পথে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি কিছু কিছু রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হলেও কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২২ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ০৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ৫৪৪ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২২ সালের ঈদুল আযহায় যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ১১ শতাংশ, আহত ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে।
উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২৫টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, আহত ১৫ জন ও ০৬ জন নিখোঁজ হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেলের অবস্থান থাকলেও এবারের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পশুবাহী যানবাহনের ব্যাপক চলাচল ও ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যানের অবাধ চলাচলের কারণে এবারের ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান।
এবারের ঈদে ৮৮টি ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ১৯৩ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নিহতের ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আহতের ৩৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মোট নিহতের ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ আর মোট আহতের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় ৮২ জন চালক, ৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৫ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ২৫ জন শিশু, ১৭ জন শিক্ষার্থী, ০৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন শিক্ষক, ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার পরিচয় মিলেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে প্রতি বছর ঈদযাত্রায় এ প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে।
প্রিয় পাঠক, আপনার স্বরচিত আর্টিলে আত্রাই বার্তায় প্রকাশ করতে নিবন্ধন করুণ । আপনার প্রতিভা তুলে ধরুন বাঙালিয়ানদের সাথে। যে কোন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুণ।