সাহিত্য

অনাকাঙ্ক্ষিত রাণী

মাহবুব আলম বিন ফিরোজ আলম

সাহিত্য ডেস্ক

সাহিত্য ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর, ২২ আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২৪

সম্মানিত পাঠক! মহান আল্লাহ তায়ালার করা সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মহাবিশ্ব বা সৌরজগত।এই মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক যে গ্রহটি রয়েছে, সেটি কালের পরিক্রমায় অসংখ্য শাসক কর্তৃক শাসিত হয়ে আসছে। কেউবা সমগ্র পৃথিবী, কেউবা গুটিকতক অন্ঞ্চল শাসন করেছেন। যারা এর আওতাভুক্ত তাদের এক অনন্য শাসক হলেন সদ্য মৃত্যুবরণ করা "রাণি দ্বিতীয় এলিজাবেথ "। যিনি মৃত্যুর পূর্বেও প্রায় ১৫ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তাকে নিয়েই আমার কিন্ঞ্চিৎ আলোচনা। 

রানি" দ্বিতীয় এলিজাবেথ "১৯৫২ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহন করে দীর্ঘ ৭০ বছর শাসন করে, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড করেছেন। অতীতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিয়ম ছিল উত্তরাধিকারদের মধ্যে বড় ছেলে সিংহাসনে বসবে কোনো মেয়ে নয়। পরবর্তীতে নিয়ম সংস্করণের মাধ্যমে মেয়ে-ছেলে কোনো বিভেদ রাখা হয়নি। এ নিয়মের কারণে মা-বাবার কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় অতীতে রানি ভিক্টোরিয়া ও ২য় এলিজাবেথ রাজক্ষমতায় আসতে পেরেছেন। রানি ২য় এলিজাবেথ যখন জন্মগ্রহন করেন।তখন কেউ ভাবেওনি যে, তিনিই এক সিংহাসনে আরোহন করবেন। কারণঃ তার বাবা রাজা 'ষষ্ঠ জর্জ' ছিলেন তার দাদা ৫ম জর্জের দ্বিতীয় পুত্র সন্তান। সেই কারণে তার বাবার কোনোদিন রাজা হবার কথাই ছিল না। সেইজন্য ষষ্ঠ জর্জের বড় ভাই 'রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড 'ছিলেন সিংহাসনের পূর্ণ দাবীদার। 

প্রথা অনুযায়ী ৮ম এডওয়ার্ড রাজাও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি স্বেচ্ছায় সিংহাসন ত্যাগ করেন৷ তার সিংহাসন ত্যাগের কারণ হলোঃ'ওয়ালি সিমসং' নামক ২ বার তালাকপ্রাপ্তা এক নারীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজা যেহেতু ব্রিটিশ চার্চের প্রধান তাই তালাকপ্রাপ্তা কোনো মেয়েকে বিবাহ করা তার জন্য নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু তিনি বিয়ে করার ব্যপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।তাই ৮ম এডওয়ার্ড ক্ষমতা ছেড়ে দেন৷ ফলে,অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ক্ষমতা চলে আসে ছোট ভাই ষষ্ঠ জর্জের উপর। ৬ষ্ট জর্জ ছোটবেলা থেকেই বেশকিছু সমস্যা নিয়ে বড় হোন। তাই তাকে সেভাবে প্রস্তুতও করা হয়নি। কারনঃতার বড় ভাই রাজা হবার পর যদি মারাও যান তাহলে তার ছেলে-মেয়েরা সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হবার কথা ছিল৷ তাই ষষ্ঠ জর্জ একদিন রাজা হবেন তা কেউ কখনো ভাবেওনি। কিন্তু তার বড় ভাই সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের মোড়ই ঘুরিয়ে দেন। ফলে,রাজা ষষ্ঠ জর্জের বংধরেরা বর্তমানে বৃটেন শাসন করছেন। ষষ্ঠ জর্জ মাত্র ১৫ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাজত্বভার গ্রহন করেন৷ তিনি ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় শাসন করা ব্যক্তি। যিনি ৭০ বছর টানা শাসন করেছেন। তবে,সমগ্র পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সময় শাসন করা ব্যক্তি নন। তার আগে ফ্রান্সের রাজা 'চতুর্দশ লুই'প্রায় ৭২ বছর শাসন করেছিলেন। রানী ২য় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে 'প্রিন্স চার্লস'রাজা '৩য় চার্লস 'নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন৷ নিয়ম অনুযায়ী ব্রিটিশ সিংহাসন এক মুহূর্তের জন্যে ও ফাকা থাকবে না। তাই রানির মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে ক্ষমতায় আসে। তার মা দীর্ঘ সময় থাকার কারণে রাজত্ব গ্রহনে তাকে দীর্ঘসময় পার করতে হয়। ৩য় চার্লসের বয়স যখন ৩ বছর তখন তার মা রানি হয়েছিলেন। বর্তমানে  তার বয়স ৭৩ বছর। তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সে সিংহাসনে আরোহন করা রাজা।তার আগ বেশী বয়সে সিংহাসন আরোহন করেন'রাজা ৭ম এডওয়ার্ড '। তার মা রানি ভিক্টোরিয়া মারা যাবার পর তিনি সিংহাসন অধিকার করেন। প্রায় ৫৯ বছর বয়সে। এক জরিপে জানা যায়ঃ বৃটেনের অর্ধেক লোকই চায় রাজা ৩য় জর্জ যেন সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে বড় ছেলে 'প্রিন্স উইলিয়ামকে যেন হস্তান্তর করা হয়। 

প্রিয় পাঠকবৃন্দ!এতক্ষন ধরে আমরা ব্রিটিশ রাজ পরিবারের গুটিকয়েক শাসল সম্বন্ধে ইষৎ বর্ণনা জেনেছি। এটাই সেই ব্রিটিশ রাজপরিবার ;যে পরিবারটি একসময় পৃথিবীর ৪ভাগের ১ ভাগ শাসন করেছে। বলা হতো,ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সূর্য নাকি কখনো ডুববে না৷ অতীতে এ সাম্রাজ্যের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অন্ঞ্চল ছিল এই ভারত উপমহাদেশ৷ মৌর্য সম্রাজ্যের পর ব্রিটিশ সম্রাজ্যই ছিল ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য। ভারত উপমহাদেশে তাদের নিকট ছিল সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। ব্রিটিশরা এ অন্ঞ্চলে বানিজ্য করতে এসে স্থানীয় জনসাধারণের নিকট থেকে কর আদায় করে ব্যবসার মূলধন হিসেবে ব্যবহার করত। সময়-সুযোগ হলে এ বিষয়ে কোনো একদিন বিস্তারিত আলোচনা করব৷ ইনশাআল্লাহ।

লেখক: ১০ম শ্রেনী, জামিআহ সালাফিয়্যাহ(নারায়ণগঞ্জ) 

প্রিয় পাঠক, আপনার স্বরচিত আর্টিলে আত্রাই বার্তায় প্রকাশ করতে নিবন্ধন করুণ । আপনার প্রতিভা তুলে ধরুন বাঙালিয়ানদের সাথে। যে কোন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুণ।


আর্টিকেল শেয়ার করুন

আরও খবর