অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের শহর ও গ্রামের তরুণ-যুবকেরা। লেখাপড়া বাদ দিয়ে জুয়ার টাকা যোগাড় করতে দিনের সিংহভাগ সময় ব্যয় করছে তারা। অনলাইনের বেটিংসাইট গুলোতে রয়েছে তাদের অবাধ চলাচল। অনেকেই জুয়ার টাকা যোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলা চলছে। তাই নতুন করে অনলাইন জুয়ায় যুক্ত হচ্ছেন অনেক তরুণ ও যুবক। কেউ কেউ অনেকটা কৌতুহলের কারণে এই সাইটে যুক্ত হয়ে এখন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
তবে অনলাইন জুয়া বন্ধে এখন পর্যন্ত বাউফল থানা পুলিশ কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অনেকটা প্রকাশ্যে অনলাইন জুয়া চললেও, এ বিষয়ে একদমই নিশ্চুপ পুলিশ।
অনলাইন জুয়ায় জড়িত তরুণ যুবকরা জানায়, ভেলকি, বেটবাজ ৩৬৫, অনএক্সবেটসহ নানা নামে পরিচালিত অনলাইন সাইটে ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস খেলায় বেটিং করে তারা। এসব সাইটে ক্যাসিনো খেলার সুযোগ ওরয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে এসব সাইটের এজেন্টদের থেকে কয়েন কেনেন তারা। পরবর্তীতে সেই কয়েন দিয়ে বেটিং করেন এবং কেসিনো খেলেন। এসব সাইটে ১ কয়েনের দাম ১০০টাকা। সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা ডিপোজিট করে ১০ কয়েন কিনতে হয় অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট থেকে। জুয়াতে কয়েন জিতলে সেই কয়েনের পরিমাণ টাকা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমেই পাওয়া যায় ১০ মিনিটের মধ্যে। দ্রুত সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জনের লোভে সবকিছু হারিয়েছে অনেকে। উপজেলার শহর ও গ্রামের অধিকাংশ তরুণ যুবকরা নিয়মিত ঝুঁকছে অনলাইন জুয়ার দিকে। অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছে নানাবিধ অপরাধে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছেন অনেকে। অনলাইন জুয়া এতোটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে যে চায়ের দোকান, হাট-বাজারে প্রকাশ্যে লাভলসের বিষয় আলোচনা করে তরুণ যুবকেরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গুগল সার্চ করে অনলাইন জুয়ার সাইটের এজেন্টদের হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার সংগ্রহ করতে হয়। এর পরে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দিয়ে নাম আর ফোন নাম্বার দিলে এজেন্টরা একাউন্ট খুলে দেয়। আবার স্থানীয় ভাবেও কিছু এজেন্ট কাজ করে। এরা পরিচিত অনলাইন এজেন্টেদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার কথা বলে গোপনে নিজেই একাউন্ট খুলে দেন। পরে এজেন্ট দেরকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে বেটিং এর জন্য একাউন্টে মেলে কয়েন। আসক্তরা পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে এক পর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। এতে করে জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। সম্প্রতি বাউফলের অনেক তরুণ যুবকের একাউন্ট থেকে কয়েন (টাকা) হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি অনলাইন জুয়ার নতুন ওয়েবসাইট। লাপাত্তা হওয়া সাইট গুলোর কয়েন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্থানীয় তরুণ যুবকদের মধ্যে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। যা স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। আগামী দিনে এসব বিষয় নিয়ে বড় ধরনের সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার একজন স্কুল শিক্ষার্থী জানান, ‘বন্ধুদের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার বিষয়টি জানেন। পরে প্রাইভেট পড়ার ৫০০ টাকা স্যারকে না দিয়ে, সেই টাকায় খেলা শুরু করেছিল সে। শুরুর দিকে ভালোই লাভ হয়ে ছিলো। কয়েক দিন পরেই লসের পাল্লা ভারী হয়। ইতিমধ্যেই সে বাড়ি থেকে বিভিন্ন কৌশলে টাকা নিয়ে জুয়ায় হেরেছে। শেষ পর্যন্ত মুঠোফোন বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাকে। এটা নেশার মত। একবার খেলা শুরু করলে নিস্ব না হয়ে ফেরা যায় না।’ তার মত এমন গল্প আছে উপজেলার অনেক তরুণদের।’
সচেতন মহলের ব্যক্তিরা বলেছেন, অনলাইন জুয়া মহামারি আকার ধারণ করেছে। যা নির্মুল করা অতীব জরুরি বিষয়। সম্প্রতি উপজেলাতে চুরি ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার গুলো জানিয়েছে ডাকাতরা উঠতি বয়সী তরুণ। অনলাইন জুয়া ও মাদকের কারণেই এসব তরুণরা হয়তো ভয়ংকর এই অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধে, প্রশাসনের সচেতনতা মূলক প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের অনলাইন জুয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা উচিত।
এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, ‘আমরা তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেছি। খুব শিগগরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
প্রিয় পাঠক, আপনার স্বরচিত আর্টিলে আত্রাই বার্তায় প্রকাশ করতে নিবন্ধন করুণ । আপনার প্রতিভা তুলে ধরুন বাঙালিয়ানদের সাথে। যে কোন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুণ।