ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও কোথাও প্লাষ্টার খসে পড়ছে, বেরিয়ে পড়েছে রড। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের ১৩৮ নম্বর কৌউগাঁও পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন নাজুক অবস্থায় অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই পাঠদান চলছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কৌউগাঁও গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে। বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনে প্রায় এক যুগ ধরে শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। দিন দিন ঝুঁকি আরো বাড়ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। বিদ্যালয়ের ভবনের এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে অভিভাবকরা অন্যত্র ভর্তি করছে তাদের ছেলেমেয়েদের। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৮ জন। বিদ্যালয়টিতে ছয়জন শিক্ষকের পদ থাকলেও সেখানে কর্মরত আছেন ৫ জন। ফলে শিক্ষক স্বল্পতার কারণেও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি পিলার, কক্ষের ছাদ ও বিমের প্লাষ্টার খসে পড়েছে। জং ধরা রডগুলো বের হয়ে আছে। অনেক স্থানে দেয়ালে ফাটল ধরেছে। শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ছাদ থেকে প্লাষ্টার খসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গায়ে পড়ছে। বিদ্যালয় ভবনের এমন পরিস্থিতিতে চরমভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে স্কুলের পাশেই টিনশেডে পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে করে যেমন শঙ্কায় দিন পার করছে শিক্ষার্থীরা, তেমনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, জরাজীর্ণ ভবনে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছি। অনেক সময় বাড়ি থেকে বাবা-মায়েরা স্কুলে আসতে নিষেধ করে। তার পরও এমন শঙ্কার ভেতরে ক্লাস করছে তারা। তারা আরো জানায়, স্কুলের এমন জরাজীর্ণতার কারণে কক্ষ ছেড়ে পাশেই অবস্থিত টিনশেডের ক্লাস করছেন। এতে করে যেমন পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি রাস্তার পাশে হওয়ায় শব্দদূষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়িত। দ্রুতই তারা নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর আলোম বলেন, দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তাই আমরা দ্রুতই নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মহসিন আলী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের অবস্থা নাজুক। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কোনো রকম পাঠদান কার্যত্রম চালিয়ে যাচ্ছি, কোনো রকমভাবে পাঠদান করানো হচ্ছে, তাও ঝুঁকির ভেতের। নিরূপায় হয়ে পাশেই একটি টিনশেডে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। শীতকালে অনেক সমস্যা হয়েছে, এখন তো আবার গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। অনেকবার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ভবন নির্মাণের জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোনো লাভ হয়নি। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ না করলে শিক্ষাথী সংকট ও নানান সমস্যা বাড়বে। এমনকি ভবন ধসে প্রাণহানিও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন বলেন, কয়েক বছর ধরে ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। আমি ব্যক্তিগতভাবে অবগত আছি। দ্রুতই নতুন ভবন নির্মাণ হয়, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।
খানসামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এরশাদুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের তালিকায় আছে। টেন্ডার হলে ভবনটি নির্মাণকাজ শুরু হবে।
প্রিয় পাঠক, আপনার স্বরচিত আর্টিলে আত্রাই বার্তায় প্রকাশ করতে নিবন্ধন করুণ । আপনার প্রতিভা তুলে ধরুন বাঙালিয়ানদের সাথে। যে কোন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুণ।