শিক্ষাঙ্গন

নাগরপুরে প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মে চলছে ঐতিহ্যবাহী ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়

মোঃ আরিফুল ইসলাম

মোঃ আরিফুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর, ২৩ আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২৪

 এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়, কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন পরিচালনায় নিয়ম বহির্ভূত বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ভাড়া দেওয়া ও বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে অনুপস্থিত থাকা সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নাগরপুর উপজেলার স্বনামধন্য প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাল মাহমুদ বক্স এর বিরুদ্ধে। এছাড়াও নিজ প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষিকার কাছে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করার লিখিত অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশেই 'ধুবড়িয়া সবুজ অবুঝ কিন্ডারগার্টেন' নামে একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলছে।


উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মো. আতিক হোসেন বলেন, আমাদের সাথে সামি নামে একজন ছাত্র নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় ৪ বিষয়ে পরীক্ষা দেয় নাই, তাকে মেইন পরিক্ষার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমাদের অনেকজনকে অনুমতি দেওয়া হয় নাই। শিক্ষকদের নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষার খাতা দেখাতে বললে, তারা খাতা দেখায় না। শিক্ষকরা বলে আমাদের জন্য কিছুই করতে পারবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এসএসসি ফরম পূরণের ফি আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা চেয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।


এদিকে, নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর এক লিখিত অভিযোগে উল্লেখিত বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জবা বেগম জানায়, তিনি ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে সদ্য যোগদান করেছেন এবং তার এমপিও (MPO) ফাইল জমা দিতে বিদ্যালয় থেকে ১০/১২ টি কাগজপত্র প্রয়োজন। সেই কাগজপত্র নেওয়ায় জন্য প্রধান শিক্ষক তার কাছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় অফিস পিয়ন ও কম্পিউটার অপারেটরকে কাগজপত্র দিতে নিষেধ করেছেন প্রধান শিক্ষক।


সকল অভিযোগ বিষয়ে ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক লাল মাহমুদ বক্স বলেন, এসএসসি ফরম পূরণের সরকারি ফি প্রদানের রশিদ দেওয়া হয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের ফান্ড ধরা আছে কিছু অতিরিক্ত টাকা। শিক্ষকদের তৈরি করা নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী কৃতকার্য এবং ১-২ বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের মেইন পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একজনকে ভুলে অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো, সেটা কেটে দেওয়া হয়েছে। কোচিং করানোর বিধান নাই তবে শিক্ষার্থীরা দুর্বল তাই করানো হচ্ছে। যারা কোচিং করছে তারাই টাকা দিচ্ছে।


নাগরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না। ম্যানেজিং কমিটি গঠন সহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ তদন্তে গেলে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। তারা প্রভাবশালী পক্ষ। যিনি প্রধান শিক্ষক, তিনি যখন যে পক্ষ আসে তার পক্ষেই কথা বলতে হয় ব্যবস্থাপনার স্বার্থে। সকল কিছু ম্যানেজিং কমিটি'র উপর নির্ভরশীল থাকায় সঠিক কথা, সঠিক ভাবে সবাই বলতে চাইলেও বলতে পারেন না। তবে সঠিক নিয়মের মধ্যেই তাদের থাকা উচিত। ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে ঘোরাঘুরি, বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজে পছন্দসই তদবির করা, এসব বিষয়ে আমি প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানো নোটিশ দিয়েছি এবং তিনি এর জবাব দিয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা আর্থিক লেনদেনের রশিদ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কিছু শিক্ষার্থী যেসব অভিযোগ করেছে তারা লিখিত ভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।


এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান জানায়, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। বিশেষ করে অতিরিক্ত ফি আদায় ও একজন শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে যেদিন আমি তদন্তের জন্য যাই, সেদিন প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ পাই। ফলে, আমি তদন্তের বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি। এছাড়াও দেখি কয়েকটি ক্লাস ছুটি হয়ে গিয়েছে। জিজ্ঞেস করলে শিক্ষকরা বলে শ্রেণীকক্ষের অভাবে ছুটি হয়ে গিয়েছে। অথচ আমি দেখলাম যে, সেখানে একটি কিন্ডারগার্টেন'কে কয়েকটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এটা একটা সরকারি ভাতাভোগী প্রতিষ্ঠান, সেখানে কিভাবে একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন চলতে পারে সেটি আমার বোধগম্য নয়। অপরদিকে, সেই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকার অভিযোগের তদন্ত করে দেখলাম, তার যোগদান থেকে শুরু করে প্রায় ১২ টি কাগজপত্র বোর্ডে পাঠাতে হয়, যেটা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে নেওয়ার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতার কারণে শিক্ষিকা তার কাগজপত্র বোর্ডে পাঠাতে পারছেন না। ফলে তার এমপিও ভুক্তির প্রক্রিয়া দেরি হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষিকা যখন কর্মক্ষেত্রে নতুন যোগদান করতে যান, তখনও প্রতিষ্ঠান প্রধান তাকে বাধা দিয়েছে। যখন শিক্ষিকা আমার শরনাপন্ন হলেন, আমি ফোন করলে প্রধান শিক্ষক ব্যস্ত হয়ে তার যোগদান গ্রহণ করেন। বর্তমানে এমপিও কাগজপত্র দিতে গড়িমসি করছেন তিনি ও মোটা অংকের টাকাও দাবি করেছেন বলে অভিযোগে জানা যায়। স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন চিত্র আসলেই হতাশাজনক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের তদন্ত করেছি আমরা এবং সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, আপনার স্বরচিত আর্টিলে আত্রাই বার্তায় প্রকাশ করতে নিবন্ধন করুণ । আপনার প্রতিভা তুলে ধরুন বাঙালিয়ানদের সাথে। যে কোন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুণ।


আর্টিকেল শেয়ার করুন

আরও খবর